জাহান্নামের চিরস্থায়ী শাস্তি – কাদের ভাগ্যে লেখা




আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—  


কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সব মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্র করবেন। লোকেরা চরম কষ্টে পড়ে মুক্তির উপায় খুঁজবে। তাদের মনে এই চিন্তা আসবে, ‘যদি আমরা কারো মাধ্যমে আমাদের রবের কাছে সুপারিশ করাতে পারতাম, তাহলে হয়তো এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতাম!


তারা প্রথমে আদম (আ.)-এর কাছে যাবে এবং বলবে, ‘হে আদম! আপনি তো সব মানুষের পিতা। আল্লাহ আপনা_কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর রূহ ফুঁকে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের আপনাকে সিজদা করার আদেশ দিয়েছিলেন। আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন, যাতে তিনি আমাদের এই কষ্ট থেকে মুক্তি দেন।’ আদম (আ.) বলবেন, ‘আমি এ কাজের যোগ্য নই।’ তিনি নিজের ভুল (নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়া) স্মরণ করে লজ্জিত হবেন এবং বলবেন, ‘তোমরা নূহ (আ.)-এর কাছে যাও, তিনি ছিলেন পৃথিবীবাসীর প্রতি প্রথম নবী।


তারপর তারা নূহ (আ.)-এর কাছে যাবে। তিনিও বলবেন, ‘আমি এ কাজের উপযুক্ত নই।’ তিনি নিজের ত্রুটি স্মরণ করে আল্লাহর কাছে লজ্জা প্রকাশ করবেন এবং বলবেন, ‘তোমরা ইব্রাহীম (আ.)-এর কাছে যাও, যাকে আল্লাহ তাঁর খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) বানিয়েছিলেন।’


ইব্রাহীম (আ.)-ও বলবেন, ‘আমি এ জন্য যথেষ্ট নই।’ তিনি নিজের ভুলের কথা স্মরণ করে বলবেন, ‘তোমরা মূসা (আ.)-এর কাছে যাও, যিনি আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন এবং যাকে তাওরাত দেওয়া হয়েছিল।


মূসা (আ.) বলবেন, ‘আমি এ দায়িত্ব পালনের যোগ্য নই।’ তিনি নিজের অতীতের ভুল স্মরণ করে বলবেন, ‘তোমরা ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও, তিনি আল্লাহর কালেমা ও রূহ।


ঈসা (আ.) বলবেন, ‘আমিও এ কাজের জন্য যথেষ্ট নই। বরং তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যাও, যাঁর আগের-পরের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে।


আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন— ‘তখন তারা আমার কাছে আসবে। আমি আমার রবের দরবারে হাজির হওয়ার অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি যখন আল্লাহর সামনে যাব, তখন সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন, আমাকে এ অবস্থায় রাখবেন। তারপর তিনি বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বলো, তোমার কথা শোনা হবে। চাইলে দেয়া হবে, সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে।


আমি মাথা উঠিয়ে এমনভাবে আল্লাহর প্রশংসা করব, যা তিনি নিজে আমাকে শিখিয়ে দেবেন। তারপর আমি সুপারিশ করব, এবং আমাকে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে (যতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে)। আমি জাহান্নাম থেকে একদল মানুষকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।


এরপর আমি আবার সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন, আমাকে এ অবস্থায় রাখবেন। আবার তিনি বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও, বলো, তোমার কথা শোনা হবে। চাইলে দেয়া হবে, সুপারিশ করলে কবুল করা হবে।’ আমি আবার সুপারিশ করব এবং আরেক দলকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেব।


আনাস (রা.) বলেন, আমার মনে নেই রাসূল (ﷺ) তৃতীয় না চতুর্থবার এভাবে সুপারিশের কথা বলেছেন। শেষে আমি বলব, ‘হে আমার রব! এখন জাহান্নামে শুধু তারা অবশিষ্ট আছে, যাদের সম্পর্কে কুরআনে চিরস্থায়ী শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

(কোনো বর্ণনায় আছে— ‘তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।)


---


সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:

এই হাদিসে কিয়ামতের দিন নবীদের সুপারিশের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করা হয়েছে। সব নবীই নিজেদের ত্রুটির কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে লজ্জিত হবেন এবং শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর রহমতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। এটি মুসলিমদের জন্য আশার বার্তা যে, আল্লাহর রহমত ও নবীর শাফায়াতের মাধ্যমে অনেক গুনাহগারও ক্ষমা পেতে পারে।

Post a Comment

أحدث أقدم